KOFIPOST

KOFIPOST

হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসায় রাশিয়া

মোঃ আব্দুল  আলিম
অ+
অ-
হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসায় রাশিয়া

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত ‘শান্তির পথ’ প্রস্তাব পাস হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটির পক্ষে ১০টি ভোট পড়ে, যেখানে রাশিয়া ও চীনও সমর্থন জানায়। তবে ব্রিটেন ও চারটি ইউরোপীয় সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। কেউই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি।


ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করে স্বাগত জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ সংঘাত সমাধানে অবদান রাখার সত্যিকারের ইচ্ছা প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চার লাইনের একটি বিবৃতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে জাতিসংঘের মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধানের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও, দ্রুত সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।


যুক্তরাষ্ট্রের দূত ডরোথি শিয়া নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, এই প্রস্তাব শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি প্রথম ধাপ, তবুও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত হতে পারি। ইউক্রেন, রাশিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে এই প্রস্তাবকে কাজে লাগাতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।


তবে প্রস্তাব পাসের প্রক্রিয়ায় কিছু উত্তপ্ত মুহূর্তও তৈরি হয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট স্থগিত করার চেষ্টা করে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের পাঠ্যে সংশোধনী আনার দাবি জানায়। ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়ার সমর্থন নিয়ে তারা ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত’ শব্দটির পরিবর্তে ‘রাশিয়ান ফেডারেশন কর্তৃক ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন’ শব্দটি যুক্ত করার দাবি তোলে। এছাড়াও, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সমর্থন করে ন্যায়সঙ্গত, দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য উপযুক্ত ভাষা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানায় তারা।


ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ের বলেন, ইউক্রেনে শান্তি আনার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে শান্তি অবশ্যই ব্যাপক, ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। এটি যেন ভুক্তভোগীকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার শর্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ডও একইভাবে শান্তির শর্তগুলোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ন্যায়সঙ্গত শান্তিই টিকে থাকবে, যা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা অনুসরণ করে। শান্তির শর্তগুলো এমন হতে হবে, যা আগ্রাসনকে পুরস্কৃত না করার বার্তা দেয়।


অন্যদিকে, রাশিয়া প্রস্তাবের দুটি সংশোধনী আনে, যেখানে সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয় এবং যুদ্ধের তীব্রতাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। তবে রাশিয়ার এই সংশোধনীগুলো পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি এবং দুটি ক্ষেত্রে রাশিয়ার নিজস্ব ভেটোর কারণে তা ব্যর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র সংশোধনী ভোটে বিরত থাকে।


নিরাপত্তা পরিষদের এই পদক্ষেপের কয়েক ঘণ্টা আগেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়। উভয় প্রস্তাবই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হয়। তবে সংঘাতের ধরন ও তার সমাধান নিয়ে ভাষার ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।


এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিলতাকে ফুটিয়ে তোলে, যেখানে বিশ্ব রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সমাধান খুঁজছে। একদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন—এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

ট্যাগস:

রাশিয়াজাতিসংঘ

কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।

© কফিপোস্ট ডট কম

অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন